রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : অত্যাধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আগামী বছর থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা ৫জি’র কার্যক্রম শুরু করতে চায় সরকার। এ জন্য নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে টেলিটকের বিদ্যমান নেটওয়ার্ক সংযোগ গ্রামপর্যন্ত সম্প্রসারণ করে জনসাধারণকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের একমাত্র সরকারি মোবাইল কোম্পানি টেলিটকের বিদ্যমান নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হবে। পাশাপাশি সুলভমূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের শহরে বসবাসকারী নাগরিকরা ইন্টারনেট সেবা নেওয়ার সক্ষম হলেও গ্রামাঞ্চলের জনগণ এ সুবিধা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত রয়েছেন। ব্যবসায়িক দিক থেকে লাভজনক না হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যক্তিখাতের মোবাইল অপারেটরগণের ইন্টারনেট সেবা দেওয়ায় আগ্রহ কম থাকায় দেশে ডিজিটাল বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী ২জি, থ্রি জি, এবং ৪জি মোবাইল নেটওয়ার্ক কাভারেজ নিশ্চিতকরণের জন্য টেলিটকের আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদিসহ কমপক্ষে ১৮ হাজার ১৬০টি সাইটে বেইজ ট্রান্সসিভার (বিটিএস) টাওয়ার স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে টেলিটকের মোট টাওয়ার সংখ্যা ৪ হাজার ৮৬৪টি যা প্রয়োজনীয় বিটিএস টাওয়ারের ২৬.৭৮ শতাংশ এবং মার্কেট শেয়ার মাত্র ৩ শতাংশ। ৪ হাজার ৮৬৪টি টাওয়ারে ২জি বিটিএস যন্ত্রপাতি স্থাপন করে ভয়েস সেবা দেওয়া হলেও ইন্টারনেট সেবা দেয়ার জন্য ৩জি যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে ৩ হাজার ৬২টিতে এবং ৪জি যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে ১১০০টিতে।
টেলিটক বাস্তবায়নাধীন ৩জি প্রযুক্তি চালুকরণ ও ২.৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ শীর্ষক অপর একটি প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ হবে। এ প্রকল্পের আওতায় টেলিটক বিদ্যমান বিটিএসগুলো আপগ্রেড করাসহ নতুন ৯০০টি ৩জি ও ৪জি বিটিএস টাওয়ার স্থাপন করেছে। চলমান এই প্রকল্পসহ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন অন্যান্য প্রকল্প সমাপ্তির পর টেলিটকের মোট টাওয়ারের সংখ্যা হবে ৫ হাজার ৯৭৭টি।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৩জি ও ৪জি যন্ত্রপাতি ৩ হাজারটি নতুন বিটিএস টাওয়ার স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর টেলিটকের মোট সাইট সংখ্যা হবে ৮ হাজার ৯৭৭টি যা এর লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫০ শতাংশ। ৩জি ও ৪জি নেটওয়ার্ক ইউনিয়ন পর্যন্ত সম্প্রসারণের পাশাপাশি টেলিটকের বিদ্যমান সুইচিং কোর নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি ৮০ লাখের সাথে আরো ১০০ লাখ অর্ন্তভুক্ত করবে। ফলে টেলিটকের মার্কেট শেয়ার প্রায় ১০ শতাংশে উন্নীত হবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ১৫০০টি নতুন সাইটে বিটিএস টাওয়ার নির্মাণ ও শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অন্য ১৫০০টি টাওয়ারের যন্ত্রপাতি স্থাপন, নেটওয়ার্কের বিদ্যমান ৫০০টি বিটিএস টাওয়ারের যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন, নেটওয়ার্কেও বিদ্যমান ৩১০০টি সাইটের বিটিএস টাওয়ারের ৩জি ও ৪জি ক্যাপাসিটি সম্প্রসারণ, নেটওয়ার্কের ২ হাজার ৩১০টি বিদ্যমান সাইটে ৪জি যন্ত্রপাতি স্থাপন, ৫জি প্রযুক্তি চালুকরণের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম হিসাবে ট্রান্সমিশন কোর নেটওয়ার্ক ১০জিবিপিএস হতে ১০০জিবিপিএস উন্নীতকরণ এবং ৫০ হাজার সরকারি দপ্তর, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিপিই এবং বিভাগীয় শহরের ৫০০টি বহুতল ভবনে টেলিটকের ইন-বিল্ডিং কাভারেজ শক্তিশালীকরণ করা হবে।